ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

অ্যাজমার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার 

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ৬ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অ্যাজমাতে ভুগে থাকেন। প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন অ্যাজমার কারণে। 

প্রশ্ন হলো কোন কারণে মানুষের দেহে এ রোগ বাসা বাঁধে? আর কিভাবেই বা এটি প্রাণঘাতি পর্যায়ে যায়?

কাশি দিয়ে শুরু অতঃপর ক্রমশ নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসা। শ্বাস প্রশাস বুকে আটকে যাওয়া, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়ার প্রচেষ্টা। মনে হয় যেন পৃথিবীতে বাতাসের ঘাটতি পড়েছে। এগুলোই অ্যাজমা অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ। 

1.অ্যাজমা কেন ও কীভাবে হয়?

অ্যাজমা শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করে। বিশেষ করে ফুসফুসের ব্রঙ্কাই ও ব্রংকিওল এর মতো ক্ষুদ্র বায়ুপথগুলোতে। এসব বায়ুপথের ভেতরের পৃষ্ঠে রয়েছে মিউকোসা নামের একটি পাতলা স্তর। যেসব মানুষের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, তাদের এ পাতলা মাংসপেশি যুক্ত মিউকোসা স্তর বহুদিন যাবত দহনের (ইনফ্লামেশন) শিকার হয়। এ সমস্যাটি তাদের ব্রংকিওলকে কিছু অ্যাজমাপ্রসারী পদার্থ বা ট্রিগারের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়া, ধুলাবালি, ঠান্ডা আবহাওয়া, সুগন্ধি, শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ ইত্যাদি অ্যাজমার ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। যখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্রংকিওলযুক্ত ফুসফুস এসব অ্যাজমার ট্রিগারের সংস্পর্শে আসে, তখন অ্যাজমা অ্যাটাক দেখা দিতে পারে।

2.অ্যাজমা কেন ও কীভাবে হয়?

অ্যাজমার প্রবণতাযুক্ত কোনো মানুষের ফুসফুসে যখন উল্লিখিত অ্যাজমার ট্রিগারগুলো প্রবেশ করে, তাদের ফুসফুসের বায়ু প্রকোষ্ঠগুলো ঘিরে থাকা রিং আকৃতির মাংসপেশিগুলো এদের সংস্পর্শে এসে সংকুচিত হতে থাকে। একই সঙ্গে ট্রিগারগুলো ভেতরের পৃষ্ঠে থাকা মিউকোসা স্তরকেও উদ্দীপ্ত করে এবং বেশি মিউকাস ক্ষরণে বাধ্য করে। সাধারণ অবস্থায় মিউকাস এর কাজ হচ্ছে দেহে প্রবেশকৃত ধুলাবালি পরিষ্কার করে দেহের বাইরে নিয়ে আসা, যাতে সেগুলো ফুসফুসের ভেতরের পৃষ্ঠে জমে থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত না ঘটাতে পারে। কিন্তু অ্যাজমা অ্যাটাকের সময় এত বেশি পরিমাণে মিউকাস ক্ষরিত হয় যে, তা নিজে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ বন্ধ করে দেয়! এর ফলাফল হিসেবে রোগীর মধ্যে অ্যাজমার লক্ষণগুলো দেখা যায়।

3.অ্যাজমা কেন ও কীভাবে হয়?

ফুসফুসের সাধারণ উঠানামাতেও মনে হতে থাকে, বুকে যেন হাপর ওঠানামা করছে। মিউকোসা স্তরে ইনফ্লামেশন এবং অতিরিক্ত মিউকাস ক্ষরণ ক্রমাগত কাশির উদ্রেক করে। ফুসফুসের সংকুচিত গহবর থেকে বায়ু নির্গমন এর সময় সেখানকার মিউকাস এর সাথে সংঘর্ষ হয়, যার ফলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ঘড়ঘড় শব্দ হয়। যার ফলে একজন অ্যাজমা রোগীর মনে হতে থাকে বাতাসে হয়ত অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। ইনফ্লামেশনের জন্য শ্বাস গ্রহণের থেকে শ্বাস ত্যাগ অনেক কষ্টদায়ক মনে হয়। এর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসে বাতাসের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, কারণ শ্বাস গ্রহণের সঙ্গে বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করছে কিন্তু ইনফ্লামেশনের কারণে তা বের হতে পারছে না।

4.অ্যাজমা কেন ও কীভাবে হয়?

ফুসফুসে বাতাসের এই আধিক্যের কারণে হাইপার ইনফ্লানেশন নামক অবস্থা তৈরি হয়। ফুসফুসে বাতাস আটকে যাওয়া তা দেহকে অধিক পরিশ্রম করার জন্য মস্তিষ্কে সংকেত দেয়, যার ফলে বাতাসে শরীর থেকে বের হতে পারে। তবে এতে হিতে বিপরীত ঘটে, দেহের অঙ্গ ও টিস্যুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ করে অতিরিক্ত রকমের অ্যাজমা অ্যাটাকের জন্য শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি সীমা অতিক্রম করে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়। তো, এই চরম অস্বস্তিদায়ক ও প্রাণঘাতী অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়?

5.অ্যাজমা কেন ও কীভাবে হয়?

প্রথম ব্যবস্থা হল অ্যাজমার ট্রিগারগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে তাদের ফুসফুস যাতে কোনোভাবেই অ্যাজমা ট্রিগারগুলোর সংস্পর্শে না আসে। তবে চাইলেই ধোঁয়া, ধুলাবালি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এজন্যই রয়েছে ইনহেলার। এর ব্যবহার একজন মানুষের অ্যাজমার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ও পুরোপুরি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু ইনহেলার শ্বাস গহ্বরের পরিধি বাড়িয়ে ফুসফুসে আটকে থাকা বাতাসকে বাইরে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। আবার অনেক ইনহেলারে থাকে কর্টিকোস্টেরয়েড, যা অ্যাজমার সমস্যার দীর্ঘকালীন সমাধান দিতে সক্ষম।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত